মেহেদী ইমামঃ
পার্বত্যাঞ্চলে চাকমা সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ ও ফসল উৎসব ঘিরে অনুষ্ঠিত হয় বিজু। বিজু ঘিরে পাহাড়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে বয়ে চলে আনন্দের বার্তা। পুরাতন বছর কে বিদায় জানিয়ে ৩ দিনব্যাপী এই বিজু অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে।
রোববার (১৩ই এপ্রিল) রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের গোলসাছড়ি এলাকায় দেখা যায়, নতুন জামা কাপড় পরে দল বেধে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে বেড়াচ্ছে ছোট্ট ছোট্ট শিশু কিশোররা। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতে দেখা যায় নানা বয়সের যুবক ও বৃদ্ধদের।
আজকে মূল বিজুতে দলবেধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নানা রকম সেমাই, ফলমূল, পাজন, পিঠা পায়েস ও মুখোরোচক খাবার খেয়ে দিন পার করছে এই সম্প্রদায়ের লোকেরা। চাকমা সম্প্রদায়ের পাশাপাশি পরিচিত ও একই এলাকার বসবাসকারীদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন নানা শ্রেণি পেশার বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষ।
মূল বিজুর এই দিনটিই মূলত উৎসবের প্রধান দিন। এই দিনটি ঘিরে নতুন জামা পরে সকালে আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি বেড়ানো, বড়দের সালাম করে আশীর্বাদ নেওয়াই হলো মূল বিজু। এদিন গান-বাজনা, নাচ ও নানা খেলাধুলার মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলা নববর্ষ ঘিরে বাঙালিরা পালন করে থাকে ১লা বৈশাখ। একইভাবে চাকমা সম্প্রদায়ের লোকেরা বিজু, মারমা সম্প্রদায়ের লোকেরা সাংগ্রাই, তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের লোকেরা বৈসুক ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকেরা বৈশাখের উৎসবকে বিষু নামে পালন করে থাকে।
সরেজমিনে ঘুরে সুবলছড়ি এলাকার বাসিন্দা, নানিয়ারচর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক নানিয়ারচর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রণ বিকাশ চাকমা’র বাড়ি গেলে দেখা যায়, নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছেন তার বাড়ি। পাহাড়ি বাঙ্গালি ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরা বিজু উৎসব পালন করছেন।
তিনি জানান বিজু হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে ফুল বিজু। আজ মূল বিজু ও আগামীকাল গইজ্জা পইজ্জা বিজু।
নানিয়ারচর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ নুরুজ্জামান বলেন, পাহাড়ের মানুষ অনেক আন্তরিক। আমরা ধর্ম বর্ণ নির্বেশেষে পাহাড়ের উৎসবগুলো পালন করে থাকি। এবার নানিয়ারচরে উৎসবমূখর পরিবেশে বিজু পালন করা হচ্ছে। আমরা পাহাড়ি বাঙ্গালি সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এই এলাকায় মিলে মিসে বাস করতে চাই। বিজু উৎসবে এই হোক আমাদের চাওয়া।
এসময় নানিয়ারচর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার, সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কবির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক মোঃ ইউনুস, সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, রাঙ্গামাটি জেলা আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব এডভোকেট মাসুম, বুড়িঘাট ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল মালেক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর, যুবদলের আহ্বায়ক মোঃ আলী, যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ রিয়াজ, মোঃ হানিফ, কৃষক দলের সভাপতি বিপুল বিকাশ চাকমা, সিনিয়র সহ-সভাপতি অনিল বিন্দু চাকমা, যুগ্ম সম্পাদক তৃণয়ন চাকমা, ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোঃ হাসান মল্লিক, সদস্য সচিব মোঃ হেলাল, যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ সাইফুল ইসলাম, স্থানীয় চালু চাকমা, পল্লি চিকিৎসক নুর মোহাম্মদ, যুবদল ও ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গতকাল সকালে চেঙ্গী নদী ও বিভিন্ন ঝর্ণায় ফুল ভাসিয়ে ফুল বিজুর মাধ্যমে উৎসব শুরু করে এ জনপদের চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষের। আগামীকাল গইজ্জা পইজ্জা বিজুর মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাহাড়ের চাকমা সম্প্রদায়ের বিজু উৎসব।