॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥
সাম্প্রতিক টানা প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে তছনছ হয়ে গেছে রাঙামাটি এলজিইডির একটি নির্মানাধীন গ্রামীণ সড়ক। রাঙামাটি সদর উপজেলার দেপ্পোয়াছড়ি এলাকায় নির্মাণাধীন প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটির ৬০ শতাংশই ঢলের তোড়ে ভেসে গেছে।
গ্রামীণ এই সড়কটি বানের তোড়ে ভেসে যাওয়ায় এলকাবাসী যেমন দুর্ভোগে পড়েছে, তেমনি মাথায় হাত পড়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারেরও। কারণ প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ সড়কটির কাজ ইতোমধ্যেই ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছিল বলে দাবি করেন ঠিকাদার। কিন্তু তার ৬০ ভাগ ভেসে যাওয়ায় এর ক্ষতিপুরণ না পেলে কাজটি সম্পন্ন করা তাদের পক্ষে দুস্কর হয়ে দাঁড়াবে। সোমবার সরেজমিনে সড়কটি পরিদর্শনের পর- বৃষ্টি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আপাতত সড়কটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন রাঙামাটি এলজিইডির নির্বাহী প্রকোশলী।
এদিকে সড়কটির অধিকাংশ স্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ায় এবং ফিলিং করা বালু ও কংকর ভেসে যাওয়ায় সড়কটি বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে বিশেষ করে রুগী ও শিক্ষার্থীরা যাতায়াতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটি সদর উপজেলার মানিকছড়ির পরেই চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক থেকে এই শাখা সড়কটি নামানো হয় দেপ্পোয়াছড়ি এলাকার মানুষের যাতায়াত সুবিধার জন্য। ১৮ মিটার প্রস্তের এই সড়কটি আগে ব্রীক সলিং বা ইটের রাস্তা ছিল। কিন্তু জায়গায় জায়গায় ইট উঠে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় এলজিইডির ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের’ আওতায় পুণঃ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৩ কোটি ৪১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষ এই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। ইজিপি টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজটি পায় রাঙামাটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা’।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজ বাস্তবায়নে নিয়োজিত প্রকৌশলী কাজী নিজাম উদ্দীন জানান, গ্রামীণ মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় নিয়ে আমরা দ্রুত কাজটি সম্পাদনের লক্ষ্যে প্রথমেই দুইটি বক্স কালভার্ট ও একটি বড় কালভার্ট নির্মাণ করি। পরে কয়েকটি স্থানে ধারক দেওয়াল নির্মাণ সম্পন্ন হলে মেগাডম ও সেন্ট ফিলিং এর কাজ করা হয়। কিন্তু প্রবল বর্ষণ আমাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পানির তোড়ে জায়গায় জায়গায় গর্ত/নালা সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি ফিলিং করা বালু ও কংকর ভেসে গেছে। ভেঙ্গে পড়েছে কয়েকটি ধারক দেওয়াল। ঠিকাদার আরো জানান যে, কাজটি আরো এগিয়ে যেতো; কিন্তু মাঝখানে, এনডিই নামক একটি প্রতিষ্ঠান পাহাড় কেটে বড় বড় গাড়িতে করে মাটি পার করায় আমাদের কাজে বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়। তাদের ট্রাকের পিষ্টনে বিদ্যমান সলিং করা ইটগুলোও নষ্ট হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। ঠিকাদার জানান, আমাদের মোট বরাদ্দ থেকে সলিং করা ইট বাবদ প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা কেটে নেওয়ার কথা বলা আছে স্টিমিটে। কিন্তু আমরা অধিকাংশ ইটই পাইনি। তিনি জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি আমাদের ক্ষতিপুরণ দিবে বলে আশ্বাস দিলেও তারা এখন ধরা দিচ্ছে না। ঠিকাদার আরো বলেন, ঢলে সড়ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপর আমাদের কোনো হাত নেই। আমরা কর্তপক্ষের নিকট ক্ষতিপুরণের আবেদন জানিয়েছি এবং তারা আশ্বাস দিয়েছেন। জানি না কি হবে, ক্ষতিপুরণ না পেলে আমরা পথে বসে যাব।
পরিদর্শনকালে সড়ক ভাঙ্গনের বিষয়ে রাঙামাটি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ শফি জানান, ‘আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখলাম রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। তবে বর্ষা মওসুম পার না হওয়া পর্যন্ত কাজ করলেও এমনই অনিশ্চয়তা থাকবে, তাই আমরা আপতত কাজটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি’।