॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
যে ছবি দেখলেই মানুষ চিনতে পারে এটা রাঙামাটি। সময়ের ব্যবধানে সেই ছবি নাম ধারণ করেছে ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ হিসেবে। প্রকৃতির রাণী রাঙামাটির সৌন্দর্য্য যেমন মানুষকে মুগ্ধ করে, তেমনি রাঙামাটির শ্যামল সৌন্দর্য্য যারা দেখতে আসেন তাদের মানসপটে আগে থেকেই সেট করা থাকে পর্যটন হলি ডে কমপ্লেক্সে থাকা ঝুলন্ত সেতুটি। ৮০ দশকে নির্মিত এই সেতুই রাঙামাটিকে করে তুলেছে ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে।
সেতুটি এবার আরো তলিয়ে গেছে। প্রায় দুইফুট পানির নীচে ডুবে যাওয়া এই সেতু এখন পর্যটকদের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ এলাকা। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন যখন ডিয়ার পার্ক এলাকায় পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স ও ঝুলন্ত সেতুটি নির্মাণ করেছিল, তখন রাঙাামটিতে সখ করে বেড়াতে আসা মানুষে সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। পর্যটন কমপ্লেক্স্রে দুইটি পাহাড়কে এক সুতায় গেঁথে নির্মাণ করা এই সেতু মানুষকে চুম্বকের মতো টেনে আনে রাঙামাটিতে।
সময়ের ব্যবধানে এই সেতুকে ঘিরেই গড়ে উঠে রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসা। পরে আরো কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র হলেও ঝুলন্ত সেতুর আবেদন একটুও কমেনি। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ছুটে আসে সেতুটি এক নজর চোখে দেখতে।
এই সুযোগে নানা আঙ্গিকের ক্ষুদ্র ব্যবসায় পরিচালনা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয় নৌযান ব্যবসায়ি ও ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে জড়িতরা জানিয়েছে- ‘সেতু ডুবে যাওয়ায় আমাদের বোটগুলো ভাড়া হচ্ছে না, পর্যটক না আসায় দোকানগুলোতে বিক্রিও হচ্ছে না। পানি না কমলে আমাদের আয় হবে না এবং এতে আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
তাদের আবেদন কাপ্তাই হ্রদের পানি অন্তত ৪/৫ ফুট কমিয়ে দেয়া গেলে সেতুটি আবার ভেসে উঠবে এবং পর্যটক আসা শুরু হবে।
ঝুলন্ত সেতু তলিয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১৫ হাজার টাকার ক্ষতি হচ্ছে খোদ পর্যটন কর্পোরেশনের। সংস্থাটির তথ্য মতে, প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের অধিক পর্যটক ওঠে এই ঝুলন্ত সেতুতে।
রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানিয়েছেন, পানির কারণে আমরা আপাতত পর্যটক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। পানি কমলে আবার ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। তিনি জানান, সেতু ভেসে না উঠলে পর্যটনে লোকসান হওয়ার পাশাপাশি পর্যটক কমবে। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা থেকে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা ডা: মাহমুদুর রহমান বলেন, ঝুলন্ত সেতু দেখেতে এসে দেখতে পারলাম না। সেতুতে পানি উঠে গেছে। মনটা খারাপ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা থেকে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. শহিদুল বলেন, আজ রাঙামাটি এসে দেখি ঝুলন্ত সেতু ডুবে গেছে। আবার ফিরে যাচ্ছি ।
বোট চালক এবং ট্যুরিস্ট গাইড আলমগীর বলেন, হ্রদে যখন পানি ছিলো না তখন পানির অভাবে বোট ভালভাবে চালাতে পারতাম না। যে কারণে পর্যটক আসতো কম। এখন হ্রদে পানি বেড়ে যাওয়ায় ঝুলন্ত সেতু ডুবে যাওয়ায় আবারো পর্যটক আগমন ঘটবে না। যে কারণে আমাদের আবারো কষ্টে পড়তে হয়েছে। রাঙামাটি ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী বলেন, আমাদের ঘাটে ১২০টি বোট রয়েছে। ট্যুরিস্ট আসলে আমরা বোট মালিকরা খুশি হয়, আয় বাড়ে। কিন্তু ঝুলন্ত সেতু ডুবে যাওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। ট্যুরিস্ট আসা কমে যাবে। পর্যটন করপোরেশনকে অনুরোধ করবো সেতুটি যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও উঁচু স্থানে বসানো হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে জমা পলির কারণে কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে গভিরতার কমে যাওয়ায় গত কয়েক বছর যাবত নিয়মিত এই সেতু বর্ষা মওসুমে জলমগ্ন হচ্ছে। রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসা ধরে রাখতে- ‘হয় সেতুটি পাঁচফুট উপরে তুলে নির্মাণ করা বা কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিং করে গভিরতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি’।