মেহেদী ইমামঃ
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে উচ্চমূল্যের কফি ও কাজুবাদাম চাষে সম্ভাবনা দেখছেন চাষীরা। প্রথম বছরেই ফলন পেয়ে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি। কফি ও কাজুবাদাম চাষে তাই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে নানিয়ারচর উপজেলার সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নের রামসুপারি পাড়া এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে ফলন এসেছে উচ্চমূল্যের কফি। আর এই ফলন দেখে সম্ভাবনার হাতছানি অনুভব করছেন স্থানীয় কফি চাষি সুনিল কান্তি চাকমা।
সুনিল কান্তি চাকমা জানান, “পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে কফি ও কাজুবাদাম চাষের মাধ্যমে দারিদ্র হ্রাসকরণ প্রকল্প” এর আওতায় ১একর জমিতে কফি চাষ করেন তিনি। কফি চারা রোপনের ১বছরে কফি ফলন দেখে সম্ভাবনা ও অর্থনৈতিকভাবে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এই কফি চাষি।
একই এলাকার এরেবোয়া চাকমা জানান, কফি, লটকন, নিম, চুইঝাল, পেপে চারা সহ রাসায়নিক এবং জৈব সার ও কীটনাশক পেয়েছেন তিনি। আর এসব চারা রোপন করে এরই মধ্যে ফলন দেখে উচ্ছ্বসিত তিনি।
স্থানীয় বাবুল চাকমা জানান, উচ্চমূল্যের কফি চাষে ফলন পেয়ে বেশ আনন্দিত তিনি। তাদের দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক কফি ও কাজু বাদাম চাষে উৎসাহ প্রকাশ করছে। সেগুন গাছ ২০-২৫ বছরে বিক্রির উপযোগী হয়। অথচ কফি চাষে এক বছরেই ফলন এসেছে। একটি কফি গাছে ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত ফলন আসে। সেই বিবেচনায় কফি চাষ অত্যন্ত লাভজনক বলেও দাবি বাবুল চাকমার।
এবিষয়ে মেজরপাড়া এলাকার ক্যান্টন চাকমা বলেন, কফি চাষ করে অনেকেই সম্ভাবনা দেখছেন। গামার ও সেগুন গাছের তুলনায় কফি চাষ বেশ লাভজনক হবে বলেও মনে করছেন এই কৃষক।
এবিষয়ে নানিয়ারচর সদর ইউনিয়নের দ্বিচান পাড়া এলাকার ধনঞ্জয় চাকমা জানান, কফি চারা রোপনের সময় লোকে তাকে পাগল বলে সম্মোধন করেছে। এখন তার কফি গাছের ফলন দেখে ব্যপক প্রশংসা কুড়াচ্ছেন এই কৃষক।
এদিকে একই এলাকার কাজু বাদাম চাষি মিতালী চাকমা জানান, উন্নয়ন বোর্ডের কফি ও কাজু বাদাম প্রকল্পের আওতায় ১একর জমিতে কাজু বাদাম চাষ করেছেন তিনি। গেলো ২বছরে লক্ষাধিক টাকার কাজু বাদাম বিক্রি করেছেন তিনি। আগামীতে আরো ভালো ফলন আশা করছেন এই গৃহিণী।
অপরদিকে রামসুপারি পাড়া এলাকার নয়ন জিৎ চাকমা, চিক্কোমনি চাকমা, রিপন চাকমা ও গুরি মরৎ চাকমার সাথে কথা বলে জানা যায়, কফি ও কাজুবাদাম চাষে অন্যান্য পাহাড়ি কৃষি পণ্যের চেয়ে বেশ লাভজনক। পাশাপাশি লটকন, পেপে, কলা, মাল্টা এবং কমলা ও অর্থকরী ফসল। এসব ফসল চাষে পাহাড়ের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব বলেও জানান তারা।
এবিষয়ে নানিয়ারচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তপু আহমেদ জানান, বড় গাছের ছায়ায় কফি চাষ করা যায় এটা বিশাল একটা বাড়তি সুবিধা। খুব বেশি সার ও পরিচর্যা দরকার হয়না। কফি গাছ বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফলন ও দ্বিগুণ হয়। কফির ফসল পাওয়ার পরে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করতে পারলে অধিকতর দাম পাওয়া যায়। সরকারীভাবে কফি প্রক্রিয়াকরণ মেশিরের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।