মেহেদী হাসানঃ
রাঙামাটির বরকল উপজেলার ভূষণছড়ায় গণহত্যার বিচার ও ভূষণছড়ার নিরীহ চারশতাধিক বাঙালি হত্যার সাথে জড়িত সকল খুনীদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি’র নেতৃবৃন্দরা।
শুক্রবার (৩০ মে) দুপুরে জুমার নামাজের পর রাঙামাটিতে ভূষণছড়া গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত, খুনিদের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের দাবিতে রাঙামাটি শহরের কাঠালতলী এলাকায় পিসিসিপি’র জেলা কার্যালয়ের সামনে যাত্রী ছাউনির নিচে ঘন্টাব্যাপী শোকসভায় এই দাবি জানান বক্তারা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি রাঙামাটি জেলা সভাপতি মো: আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে ও পিসিসিপি পৌর সভাপতি পারভেজ মোশাররফ হোসেন এর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন পিসিসিপি’র রাঙামাটি জেলা শাখার যুগ্ন সম্পাদক মহিউদ্দিন নুহাশ, অর্থ সম্পাদক মো: আরিফুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ইসমাঈল গাজী, পৌর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।
এসময়ে নেতৃবৃন্দরা বলেন, ১৯৮৪ সালের ৩১ শে মে জেএসএসের তৎকালীন সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনী কর্তৃক নৃশংস গণহত্যার শিকার হন রাঙামাটির দুর্গম এলাকা বরকল উপজেলার ভূষণছড়ার চারশতাধিক বাঙালি। বেঁচে যাওয়া বাসিন্দারা আজও ভুলতে পারেননি নারকীয় তাণ্ডবের ভয়াল সেই স্মৃতি।
রাঙামাটি জেলা সদর থেকে নদী পথে ৭৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ছোট্ট জনপদ ভূষণছড়া। প্রায় ৪১ বছর আগে ১৯৮৪ সালের ৩১ শে মে এখানে ঘটে পার্বত্য অঞ্চলের সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী সংঘাত। ভোর ৪টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শান্তিবাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে প্রায় চারশতাধিক বাঙালিকে।
১৯৮৪ সালের ওই ঘটনায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে শতাধিক পরিবার। পাহাড় ছেড়ে পালিয়ে যায় ১৬শ’ বাঙালি পরিবার। থেকে যাওয়াদের মাঝে এখনও বিরাজ করে আতঙ্ক। নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ডের পরও কেউ মামলা করেনি ভয়ে। প্রশাসন জিডি করলেও ক্ষতিপূরণ পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত কেউ।
এত বড় নির্মম হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর দীর্ঘ ৩ যুগেরও বেশি পার হলেও তার কোন বিচার বা তদন্ত হয়নি। একের পর এক গণহত্যা করে বাঙালিদের হত্যা করার পরও পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কোন বিচার না হওয়াতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এখনও বেপরোয়া ভাবে প্রতিনিয়ত খুন, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি চালিয়ে পাহাড়কে অশান্ত করে রেখেছে।
তাই বক্তারা পার্বত্য অঞ্চলে চলমান হত্যাকান্ড, খুন, গুম, অপহরণ বন্ধে পাহাড়ে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন করা, পাহাড় থেকে চাকমা শাসন বন্ধ করা, পার্বত্য অঞ্চলে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএস, ইউপিডিএফ কর্তৃক সকল হত্যাকান্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে শাস্তি নিশ্চিতসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের লিডারদের ফাঁসির দাবি জানান।
শোকসভা শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা ইব্রাহিম।