নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
সাম্প্রতিক সহিংসতা ও সন্ত্রাসী হামলার আতঙ্ক কাটিয়ে নানিয়ারচর সাপ্তাহিক হাটে ফিরেছে স্বস্তির নিশ্বাস। বিগত সময়ে আঞ্চলিক বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক ও সহিংসতামূলক হামলা-মামলার ঘটনায় এই সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকতে দেখা গেলেও এবার ভিন্নতা দেখো গেছে নানিয়ারচর বাজারে।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে নানিয়ারচর উপজেলা সদরের সাপ্তাহিক হাটে মিলেছে ক্রেতা বিক্রেতা সমাগম। দূর-দূরান্ত থেকে পণ্য ক্রয় বিক্রয়ে দেখা যায় পাহাড়ি-বাঙালি সহ নানা ধর্ম বর্ণের মানুষের উপস্থিতি।
তবে নিত্য পণ্য ও কাচাঁমালের দোকান গুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেলেও মনোহরি এবং শাখারি দোকান গুলোতে ক্রেতা উপস্থিতি কম ছিলো বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন বিক্রেতা।
চাকমা সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন সাধারণ ক্রেতা জানান, গত কয়েকদিন যাবৎ ভাবনায় ছিলাম চলমান সহিংসতা নিয়ে। সাপ্তাহিক হাটে আসা যাবে কিনা এনিয়ে ছিলো সংশয়। পরে খোজঁ খবর নিয়ে আজ বাজারে এসেছি।
সাপ্তাহিক হাটে আসা মিল্টন চাকমা জানান, আমরা পাহাড়ে শান্তিতে থাকতে চাই। রক্তপাত ও সহিংসতা আমরা চাইনা। যেসব ভূল বোঝাবুঝি নিয়ে পাহাড়ে দ্বন্দ সৃষ্টি হয়েছে সরকারের কাছে তার সমাধান ও চান এই ক্রেতা।
রানীরহাট থেকে পাহাড়ি পণ্য ক্রয় করতে আসা এক ব্যবসায়ী জানান, দীর্ঘদিন পাহাড়ের পণ্য ক্রয় করে শহরে তা বিক্রয় করেন তিনি। পাহাড়ে অস্থিরতা দেখা দিলে সে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই পাহাড়ে আর কোন রক্তপাত চান না তিনি।
কাচাঁমরিচ বিক্রি করতে আসা চল্লিশোর্ধ এক নারী জানান, আজ নান্যেচর বাজার খোলা আছে তাই সে সাড়ে দুই কেজি মরিচ বিক্রি করতে পেরেছেন। এগুলো বিক্রি করে সে সপ্তাহের নিত্য পণ্য সামগ্রী ক্রয় করেছেন। এই মরিচ বিক্রি করতে না পারলে এসপ্তাহের বাজার করা হতো না। আগামী সপ্তাহ থেকে আরো ক্রেতা বিক্রেতার উপস্থিতি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে বিক্রেতা আজিজ জানায়, সারাদিন উল্লেখযোগ্য তেমন বেচাকেনা হয়নি তার। এলাকাবাসীর মধ্যে আস্থা ও সম্প্রীতি ফিরে এলেই লাভবান হবেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
এব্যপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আমিমুল এহসান খান জানান, নানিয়ারচরে স্থানীয় জনগণের মাঝে এখন পর্যন্ত কোন সহিংসতা দেখা দেয়নি। আমি মনে করি এই এলাকার মানুষ শান্তিপ্রিয়। আমরা ইতোমধ্যে সম্প্রীতি সমাবেশ করেছি। আমি আশা করছি স্থানীয়দের মাঝে সম্প্রীতির এই বন্ধন অটুট থাকবে।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়িতে মামুন নামের এক যুবক কে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দিঘীনালা ও পরে রাঙামাটিতে ২পক্ষের হামলার, প্রশাসনের ১৪৪ধারা জারি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের ডাকা অবরোধের ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে পাহাড়ে। এর পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার সাপ্তাহিক হাটে স্থানীয়দের উপস্থিতিই যেন মুছতে শুরু করেছে সেই আতঙ্কেও ছাপ।